আধুনিক শিক্ষাবিজ্ঞানীরা শিক্ষার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন, 'শিক্ষা হলো আচরণের ইতিবাচক স্থায়ী পরিবর্তন'। বার্ট্রান্ড রাসেল বলেন,' শিক্ষার উদ্দেশ্য হচ্ছে শিক্ষার্থীর উত্তম চরিত্র গঠন'। মহামতি সক্রেটিস বলেছেন, শিক্ষার উদ্দেশ্য হল সত্যের লালন ও মিথ্যার অপনোদন। এককথায় পরিপূর্ণ শিক্ষা শুধু জ্ঞানের স্তরেই সীমাবদ্ধ নয়, জ্ঞানার্জনের পর তা কার্যকরীভাবে ব্যবহারিক জীবনে প্রয়োগই হলো শিক্ষা। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীকে পাঠবুঝিয়ে দিলেই শিক্ষকের দায়িত্ব শেষ নয়, পাঠ্যবিষয়ের বাইরে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় মূল্যবোধের আলোকে শিক্ষার্থীর আচরণ নিয়ন্ত্রণ করা শিক্ষকের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এ অর্থে বিদ্যালয়কে 'সমাজের ক্ষুদ্র সংস্করণ বলা হয়'। অনেক সময় পরিবারের দীর্ঘদিনের লালিত সংস্কারেও আঘাতহানে শিক্ষকের উপদেশ। হ্যামিলনের বাঁশির মতো সব কিছু ভুলিয়ে দিয়ে ভাবতে শেখায় নতুন কিছু যা কিছু বাঞ্ছিত, মার্জিত ও ইতিবাচক। একজন শিক্ষক শুধুই শিক্ষক নন তিনি একজন প্রশিক্ষকও বটে। শিক্ষক যখন শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের কোন বিষয় বুঝিয়ে দেন বা শিখিয়ে দেন তখন তিনি শিক্ষক; যখন সৃজনশীলতা,সততা,দক্ষতা, নৈতিকতা, শৃঙ্খলা, নিয়মানুবর্তিতা,শিষ্টাচার,দেশপ্রেম, নেতৃত্ব ,কষ্টসহিষ্ণুতা,গণতন্ত্রীমনষ্কতা ও পরমতসহিষ্ণুতা ইত্যাদি সহশিক্ষাক্রমিক কার্যক্রমের বিষয়গুলো নজরদারিতে রাখেন ও নিয়ন্ত্রণ করেন তখন ঐ শিক্ষকই একজন প্রশিক্ষক। এ জন্য বোধ হয় আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট তার পুত্রের প্রধান শিক্ষকের কাছে লিখেছিলেন— '..তাকে শেখাবেন পাঁচটি ডলার কুড়িয়ে পাওয়ার চেয়ে একটি উপার্জিত ডলার অধিক মূল্যবান।.......আমার পুত্রের প্রতি সদয় আচরণ করবেন কিন্তু সোহাগ করবেন না, কেননা আগুনে পুড়ে ইস্পাত খাঁটি হয়। আমার সন্তানের যেন অধৈর্য হওয়ার সাহস না থাকে'। তাহলে আমরা বলতে পারি পাঠ্যপুস্তকের বাইরে শিক্ষকের নিকট থেকেও শিক্ষার্থীর অনেক কিছু শেখার আছে। কিন্তু আজকাল শিক্ষকগণ প্রশিক্ষক হতে চান না। এমনকি অভিভাবকও শিক্ষার্থীর প্রতি শিক্ষকের নজরদারিকে প্রতিষ্ঠানের বাড়াবাড়ি বলে মনে করেন। একারণেই আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে শ্রমবিমুখতা,স্বার্থপরতা, দুর্নীতি, অনিয়ম। বলা যায় অনিয়মই নিত্য দিনের নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকার ঘোষিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১১টি শাস্তি বিষয়ক নীতিমালা ও একে কেন্দ্র করে শিক্ষকদের যেভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে তাতে শিক্ষক সমাজে আজ ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা।